সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বাংলাদেশ

16722495_650752628446486_8261734739381173750_o

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বাংলাদেশ

যে মাথা নোয়াতে জানে সে কখনো মাথা খোয়ায় না’

১৯৪৮ সালের প্রথম ভাষা আন্দোলনের সময়েই ২৪ মার্চের ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কার্জন হলের কনভোকেশনের ভাষণে পাকিস্তানের বড় লাট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হবে, কথাটা উচ্চারণের পর পর হাতেগোনা কয়েক জন ইংরেজিতে ‘নো’, ‘নো’ প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছিলেন । আবদুল মতিন ছিলেন তাদের অন্যতম। তার সাথীরা তাকে ভাষা মতিন বলে ডাকতেন ।

এখানে উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে, যে বছর সদ্যোজাত পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসেছিলেন, সেদিন রমনা রেসকোর্স ময়দানে তাঁর দেয়া ‘Urdu and urdu alone shall be the state language of Pakistan’— এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটেছিল। রেসকোর্সের মাঠে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন তখনকার কৈশোর উত্তীর্ণ পরবর্তীকালে ষাট সত্তর দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব প্রদানকারী সাংবাদিক, লেখক, রবীন্দ্র গবেষক, শিল্পী ওয়াহিদুল হক।

ভাষা মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার একটি ছোট্ট গ্রাম ধুবালীয়ায়। বর্ণমালার হাতেখড়ি মা-বাবার কাছে। ১৯৪৩ সালে এনট্রেন্স পাস করেন। ওই বছর তিনি রাজশাহী গভঃমেন্ট কলেজে আই এ ভর্তি হন। ২ বছর পর ১৯৪৫ সালে তিনি এইচএসসি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন। দৈহিক আকৃতি, উচ্চতা আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার বলে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। দেশে আসার পর তিনি ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টস (পাশ কোর্স) এ ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন ইন্টার ন্যাশনাল রিলেশন বিভাগ থেকে।

১৯৪৯ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেবার সময় তিনি গ্রেফতার হন এবং দু’মাসের আটকাদেশের শিকার হন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁকে জানানো হয় যে তিনি সিএসপি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে চাকরীর শর্ত তাঁর কাছে অসম্মানজনক মনে হওয়ায় তিনি এতে যোগ দেননি। আটকাদেশের মেয়াদ শেষে ঢাকা ভার্সিটির তৎকালীন ভিসি ড. মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁকে আন্দোলন করবেন না মর্মে মুচলেকায় সই করতে বললে তিনি রাজী হননি। এ কারণে তিনি তিন বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে তাঁর প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করে ঐ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

তার আপনজনদের কাছে তার আরও কিছু নাম ছিল। ভ্রাতৃস্থানীয়রা তাকে ডাকত বৈয়ম ভাই বলে। নানার বাড়িতে তার নাম ছিল রাব্বানী।ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে চাল চলন ছিল খুবই কেতা-দুরস্ত। ধবধবে সাদা শার্ট, সাদা প্যান্ট ও সাদা কেডস পরে আবদুল মতিন টেনিস খেলতেন। তার চালচলন সেই সময়কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী দের দৃষ্টি কাড়ত।

বদলে গেলেন ১৯৪৮ সালে। সদ্য স্বাধীন পাকিস্তানের মানি অর্ডার ফরম, লেফাফা ও পোস্টকার্ডে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু ভাষায় লেখা থাকত। ব্যাপারটি আবদুল মতিনের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। পাকিস্তানে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবুও কেন উর্দুর পাশে বাংলা স্থান পেল না !
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিয়ে সেই সভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে সভায় উপস্থিত বিপুল জনতা আশাহত হলেন, আশা হত হলেন আবদুল মতিনও।

১৯৪৮ সালে যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তা নানা কারণে সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়েছিল । ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ আবারও উদযাপিত হয়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তখনও মনমরা ভাব বিরাজ করছে।
এ উপলক্ষে আবদুল মতিনের প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে মতিনই এ পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন কেবল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে এবং ৪ ফেব্রয়ারি ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ২০ ফেব্রয়ারি রাতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে সর কারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা বা না করা নিয়ে যে ভোটা ভুটি হয় তাতে ১১ জন ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে এবং ৩ জন ভাঙার পক্ষে ভোট দেয়। একজন ভোটদানে বিরত থাকেন। আবদুল মতিন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ছিলেন। তিনি পরদিন ২১ ফেব্রয়ারি গাজীউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আমতলার বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য বক্তব্য দিয়ে ছাত্রছাত্রী দের উদ্বুদ্ধ করেন।

১৯৫২ সনের ২৩ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য ছাত্রদের নিয়ে রাত জেগে শহীদ মিনার তৈরী করেন। ১৯৫২ সনের ৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার একটি গোপন বৈঠক থেকে অন্যান্যদের সাথে তিনিও গ্রেপ্তার হন এবং এক বছর পর ১৯৫৩ সনের ১৪ মার্চ মুক্তি পান।

কারারুদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কমিউনিজমের আদর্শে দীক্ষিত ছিলেন না। কারাগারে কমিউনিস্ট নেতাদের সংস্পর্শে এসে কমিউনিজমের ভাবা দর্শে আবদুল মতিন উদ্বুদ্ধ হন। তার জীবন নতুন বাঁকের দিকে মোড় নিতে থাকে।

১৯৫২ সালে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র-সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হয়। আবদুল মতিন ছিলেন এ সংগঠনের দ্বিতীয় সভাপতি। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু, যিনি এখন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর।

ছাত্র আন্দোলন শেষে কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক মতাদর্শভিত্তিক দ্বন্দ্বে পার্টি বিভক্ত হলো মস্কো ও পিকিং দুই ভাগে। আবদুল মতিন পিকিং মতবাদের সঙ্গেই থেকে যান । পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সংগঠন ন্যাপ গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানী কৃষক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার ডাক দেন। মওলানা ভাসানী লক্ষ্য স্থির করেছিলেন এ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা হবে দশ লাখ। এর প্রত্যেক সদস্য মাথায় পরবে লাঙ্গল খোঁচিত লাল টুপি। এদের প্রত্যেকের হাতে থাকবে শক্ত বাঁশের লাঠি। এরা গ্রামের অত্যাচারী শোষক, জোতদার, মহাজন ও ইজারাদারদের প্রতিরোধ করবে। মওলানা ভাসানীর এ ডাকে সাড়া দিয়ে আবদুল মতিনসহ অন্যরা কৃষক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী বা লাল টুপি বাহিনী গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তারা গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে চারণের বেশে ঘুরে বেড়ান।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীটি হতে পারত জনযুদ্ধের প্রধান শক্তি। কিন্তু ভাসানী থেকে দূরে সরে পরদেশী অর্থাৎ চীনপন্থী তাত্ত্বিকদের অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে গিয়ে এ দেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট তথা হক-তোয়াহা -মতিন-আলাউদ্দিন-টিপু বিশ্বাস প্রমুখদের চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয়। মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে আখ্যা দেন !

এখানেও তাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ হয়, যার ফলে এদের কেউ কেউ মুক্তি যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকলেও অনেকেই পরবর্তীতে নিজস্ব লোকবল নিয়ে নিজস্ব অবস্থান থেকে পাকিস্তানি খানসেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই এ অবতীর্ণ হন ।
যেমন ভাষা মতিন ! যদিও সামন্ততন্ত্র বিরোধী এবং পশ্চিম বঙ্গের নকশাল আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চারু মজুমদারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আবদুল মতিন রাজনীতিতে আওয়ামী লীগবিরোধী ছিলেন কিন্তু গ্রূপের অনেকের থেকে আলাদা হয়ে সেপ্টেম্বরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাবনা জেলখানার ফটক খুলে দেয়া হয়েছিল এদের উদ্যোগেই। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কয়েদিরা তখন এদের সঙ্গেই ছিলেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর দালালদের ধরে ‘গলা কাটা রাজনীতির’ শিকার করেছিলেন। এরা সংগঠিত হয়েছিলেন বর্তমান সিরাজ গঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার শৈলজানার চরে। সংগঠিত হয়ে এরা রাজাকার হত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী খবর পেয়ে ওদের আস্তানায় হামলা করে এবং আবদুল মতিনের বাবা ও চাচাত এক ভাইকে হত্যা করে। পরে বাড়িঘর জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়। এদের দলীয় কর্মীরা টিপু বিশ্বাসদের এলাকায় গিয়ে আস্তানা গাড়েন। কিন্তু সেটাও নিরাপদ ছিল না এবং পাকিস্তানি সেনা ও দালাল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যখন টেকা সম্ভব হয়নি, তখন তারা রাজশাহীর আত্রাই এলাকার মুক্তাঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং নিজেদের সংগঠিত করেন।

একটি সদ্য স্বাধীন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত দেশকে সকলে মিলে গড়ার বদলে বিপ্লবের স্বপ্নের স্থান সময় ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের মন মানসিকতার সঠিক মূল্যায়ন এ ব্যর্থ হয়ে তারা কোটি প্রাণের বিসর্জনে অর্জিত ভূখণ্ডের প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে শ্রেণীশত্রু খতমের লক্ষ্যে আবার যুদ্ধে নামেন !
এটি ছিল মতিন-আলাউদ্দিন-অহিদুর রহমানের ‘আত্রাই-এর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল। বিধ্বস্ত দেশ স্বজন হারানো মানুষের তখন ভাংচুরের দিকে আর মন ছিলোনা ! সেজন্যে জনসমর্থনও ছিলোনা তাদের পক্ষে !

ভাষা মতিনের ব্যক্তিগত জীবন কেটেছে আদর্শের আলেয়ার পেছনে। পৈতৃক সহায়-সম্পদ কোথায় ভেসে গেছে, তার খবর রাখার ফুরসত হয়নি। নিজ জেলা পাবনায় তিনি জঙ্গী-সশস্ত্র কৃষক সংগ্রাম পরিচালনা করে আলোড়ন তুলেছিলেন পাকিস্তান আমলে।

পত্নীর শিক্ষকতা সূত্রে অর্জিত অর্থই ছিল জীবিকা নির্বাহের সামান্য সম্বল। নিরহংকারী, সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত এই মানুষ আয়েশ-বৈভবের জীবন পরিহার করেছিলেন জীবিতাবস্থায়। মরদেহও দিয়ে গেছেন মানবতার সেবায়। তাঁর ভাষায় ‘মানবতার জন্য কিছু করে যাবার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা।’

‘গলা কাটার রাজনীতি’-কে ভুল বলে স্বাভাবিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে ফিরে আসার জন্য ‘কমিউনিটি লীগ’ গঠন করেন। মত বিরোধের কারণে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টিও ত্যাগ করেন। দেশের জেলায় জেলায় কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ নতুন করে শুরু করেন , শারীরিক অসুস্থতার কারণে আর সচল থাকতে পারেননি । সবশেষে পুরনো সংগঠন ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীতে যুক্ত হন।

লিখেছেন “কমিউনিস্টরা সামন্তবাদ বুঝতো যদি তারা জনগণ,শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতীর মধ্যে যেতো, থাকতো ও কাজ করতো; তাহলে জনগণ যেমন বলে, লাইগা থাকলে ভেন্না গাছেও সার হয়, তা-ই হতো। কিন্তু আমরা জনগণের সাথে লাইগ্যা থাকিনাই, ভাসাভাসা ভাবে ছিলাম…।”

ভাষা মতিন থেকে কমরেড মতিন হওয়া আরেক উপন্যাস, যেখানে মিশে আছে চেতনা, প্রেরণা, বিভ্রান্তি, শিক্ষা, থেমে যাওয়া এবং থেমে না থাকা !

কৃতজ্ঞতা : ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক কামাল লোহানী, প্রাবন্ধিক বদরুদ্দীন ওমর, আহমদ রফিক ও ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্য’

2 thoughts on “সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বাংলাদেশ

Leave a comment